News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:২০, ২০ আগস্ট ২০১৯
আপডেট: ০০:৫৭, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন প্রেস ব্রিফিং দুনিয়ার কোথায় আছে: হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন প্রেস ব্রিফিং দুনিয়ার কোথায় আছে: হাইকোর্ট

বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাই কোর্ট বলেছেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, ইদানীং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রেসব্রিফিং (সংবাদ সম্মেলন) করে। যেখানে আসামিকেও সামনে রাখা হচ্ছে। এর আগে গাজীপুরের এক জঙ্গির মামলার সময় আমরা (আদালত) বলেছিলাম, আসামিদের এভাবে মিডিয়ার সামনে হাজির করে বক্তব্য (সংবাদ সম্মেলন) না দিতে। কিন্তু এখনও দেখছি বিভিন্ন সময় আসামিদের মিডিয়ার সামনে হাজির করা হচ্ছে। এটা দুনিয়ার আর কোনো দেশে আছে কি না, জানা নেই।

রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।

শুনানিতে আদালত বলেন, মামলা তদন্তাধীন থাকাবস্থায় পুলিশ সুপার (এসপি) কীভাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন? তখনও মামলায় করা আসামি (মিন্নি) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।

আদালত আরও বলেন, শুধু এ মামলায় না আরও অনেক মামলায় আমরা সংবাদ সম্মেলন (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর) দেখছি। তদন্ত পর্যায়ে এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করা কতটুকু যুক্তিসংগত?

হাইকোর্ট বলেন, বরগুনার এসপি বলেছেন, আসামি মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন। বিচারিক জবানবন্দির আগে এসব কি পাবলিকের (সংবাদ সম্মেলন করে) সামনে বলা যায়? প্রায় দেখা যায়, তদন্ত পর্যায়ে এ ধরনের ব্রিফিং করা হচ্ছে, যা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়। তিনি (মিন্নি) যদি দোষ স্বীকার করেনও, তাহলেও কি এসপির এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করা ঠিক হয়েছে?

এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, এটা উচিত হয়নি। আদালত বলেন, মিন্নিকে সকালে সাক্ষী হিসেবে নেয়া হয় পুলিশ লাইনে। রাতে তাকে আসামি করা হয়। তাহলে সুষ্ঠ তদন্ত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু আছে?

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মিন্নিকে অনেক পরে (মামলা হওয়ার) ডাকা হয়েছে।

আদালত বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের অনেক নিয়ম-নীতি রয়েছে। আগে ক্যান্টনমেন্টে ডাকা হতো। সেখানে একজন লোককে নেয়া হলে তার মানসিক অবস্থা কি হতে পারে?

এ পর্যায়ে মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, জামিন আবেদনকারীকেও (মিন্নি) সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয়েছিল। পরে আসামি করা হয়েছে।

তখন আদালত বলেন, অতিউৎসাহী হলে নানান সমস্যা হয়। এগুলোর একটা নীতিমালা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে) থাকা দরকার।

তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, আগামী ২২ আগস্ট এ মামলায় বিচারিক আদালতে পুলিশ প্রতিবেদনের দিন ধার্য্ রয়েছে। সেখানে সব উঠে আসবে।

তখন আইনজীবী আমিন উদ্দিন বলেন, ১৬৪ ধারায় মিন্নির জবানবন্দি পড়লে বোঝা যায়, এটা সাজানো। একজন মানুষের কি এত ক্ষমতা যে, তিনি এত সুন্দর করে ঘটনার বর্ণনা দেবেন? আসামিকে (মিন্নি) যদি জামিন দেয়া হয়, তবে কোনোভাবেই তদন্ত প্রভাবিত হবে না। জামিন দিলে সে পালিয়ে যাবে না। তার বাবার হেফাজতে থাকবে।

আমিন উদ্দিন বলেন, তাকে ডেকে নিয়ে সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার দেখানো হয়। একটা মেয়েকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তার ওপর কতটা চাপ থাকে, তা বোঝা যায়! এ ছাড়া এ মামলার আরেক আসামিকে ১ জুলাই গ্রেফতারের পর ১৪ জুলাই জবানবন্দি নেয়া হয়, যার মধ্যে একটি বড় সময়ের ব্যবধান রয়েছে।

এরপর আদালত মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ২৮ আগস্ট এ রুলের ওপর শুনানি হবে। একইসঙ্গে মিন্নির জবানবন্দির বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন। আগামী ২৮ আগস্টের মধ্যে তাকে ওই ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ ছাড়া এ মামলার যাবতীয় নথি (কেস ডকেট) নিয়ে হাজির হতে তদন্ত কর্মকর্তাকে তলবের আদেশ দেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়