ঢাকা: ব্যবসায়ীদের পার্লামেন্ট খ্যাত ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক পদের নির্বাচন আগামী ২৩ মে অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচিত পরিচালকরা ২৫ মে সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নির্বাচিত করবেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসা, প্রতিটি জেলায় শিল্পনগরী এবং চেলা চেম্বারের নিজস্ব ভবন প্রতিষ্ঠা, বন্দর ও বন্দর নগরীর উন্নয়নসহ মোট ১৫ চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ‘উন্নয়ন পরিষদ’।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি এবং অর্থনৈতিক মুক্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন উন্নয়ন পরিষদের প্যানেল লিডার রাজশাহী চেম্বার থেকে মনোনীত পরিচালক ও নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহমাদ। এসময় এ প্যানেলের চেম্বার গ্রুপের ১৬ জন ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ১৬ জন পরিচালক প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।
ইশতিহারটি নিউজবাংলাদেশের পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল-
“প্রিয় বন্ধুগণ,
আমার আন্তরিক সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।
দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় এবং বিশ্বের ৪৭ তম (সূত্র- আই.এম.এফ.) অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণের কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার ফসল। অদূর ভবিষ্যতে আমরা বিশ্বের একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। আর এই আকাঙ্খিত স্বপ্নকে পূরণ করতে যাদের অবদান অনস্বীকার্য তারা এদেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। এই ব্যবসায়ীদের প্রাণের সংগঠন, ব্যবসায়ীদের পার্লামেন্ট খ্যাত এফবিসিসিআই এর আসন্ন পরিচালক পদের নির্বাচন আগামী ২৩ শে মে ২০১৫। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি এবং অর্থনৈতিক মুক্তি ও সমৃদ্ধির জন্য নির্বচিত পরিচালকগণ ২৫ শে মে-২০১৫ সভাপতি, ১ম সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি নির্বাচিত করবেন।
বন্ধুরা, আপনারা অবগত আছেন যে, আমি সম্ভ্রান্ত শিক্ষা অনুরাগী পরিবারের সন্তান। আমার পিতা প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। আমার পিতামহ ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মুসলমান নির্বাহী প্রকৌশলী। আমিও অক্সফোর্ড থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি। তা স্বত্ত্বেও ব্যবসাকে বেছে নিয়েছি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে আজ ব্যবসায়ের উচ্চ শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। এ কারণে সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের সমস্যা
আমার জানা আছে। বর্তমানে আমি বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা পরিচালনা করছি (উৎপাদন, আমদানী-রপ্তানি, সার্ভিস, লজিস্টিকস)। ছোটখাটো থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যবসার সকল সেক্টরে অবাধ বিচরণ, চেম্বার ও বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্ব প্রদান সহ এফবিসিসিআই এ দুই বার পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। তাই আমি মনে করি ‘উন্নয়ন পরিষদ’ প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে আমার এ অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে নতুন এক উন্নয়ন মুখী এফবিসিসিআই গড়ে তুলতে পারব। বিদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাথে আমার অত্যন্ত আন্তরিক সম্পর্ক থাকায় তাদের সহযোগীতাও নিতে সক্ষম হব।
এফবিসিসিআই এর আধুনিকায়ন, নতুন ব্যবসা বাণিজ্য কর্মসূচি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ, ব্যবসা ও ব্যবসায়ীদের উন্নয়ন এবং কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উন্নয়ন ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কিছু পরিকল্পনা এখানে উপস্থাপিত হল। যা আপনাদেরই প্রাণের আকুতি এবং পরামর্শ।
০১। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আস:
ব্যবসা করতে গিয়ে একজন ব্যবসায়ী প্রতিনিয়ত অজস্র বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে। এর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় বাধা ব্যাংক সুদের হার। আমরা নির্বাচিত হলে এই ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এই কঠিন বাধার সহজ, কিছু সম্ভাব্য সমাধান ইতোমধ্যে আমি আপনাদের অবগত করেছি। আমরা মনে করি সবার জন্য ৯% হারে সুদ নির্ধারণ করা সম্ভব।
০২। প্রতিটি জেলায় শিল্প নগরী গড়ে তোলা এবং সবুজ শিল্পায়নের সূচনা:
ভূ-প্রকৃতির এক অপরূপ লীলা ভূমি বাংলাদেশ। এদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে বহুমুখী সম্পদ। এই সম্পদের সঠিক এবং উপযুক্ত ব্যবহারের জন্য আমরা প্রতিটি জেলায় শিল্প নগরী গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করব। বিভিন্ন স্থানের উপযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করব।
০৩। প্রতিটি চেম্বারের অধীনে ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের ক্ষমতা:
ব্যবসায়ীদের উন্নত দেশগুলোর আদলে নানা সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হলে তারা দেশে ও বিদেশে বিনিয়োগ করে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখতে পারবে। উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাজ সহজ, দ্রুত এবং কম খরচে সম্পন্ন করার জন্য এ উদ্যোগ বিশেষ সহায়তা প্রদান করবে। আমরা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সদস্য ভুক্তি বাধ্যতামূলক করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেব। সংশ্লিষ্ট উৎস থেকে রাজস্বের একটি ক্ষুদ্র অংশ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের আয় বৃদ্ধি হবে। আন্তর্জাতিক ব্যবসা সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলো থেকে তহবিল সংগ্রহ করে এফবসিসিআই এর অধিভুক্ত সংগঠনগুলোর সহায়তা প্রদান করব।
০৪। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবো আমরা:
বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নের প্রয়োজন অপরিহার্য। আমরা ইতিমধ্যে মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্টগুলোর অনেক শর্ত পূরণ করেছি এবং অধিকাংশ সার্ক সদস্যদের থেকে এগিয়ে আছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে আরও+২০ সম্মেলনের চুক্তি বাস্তবায়ন করা।
০৫। জেলা চেম্বারের নিজস্ব ভবন প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সম্পন্ন করে গড়ে তোলা:
মানুষ তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই সুন্দর মনোরম যুগোপযোগী কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের কর্তব্য। এ লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় উন্নয়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে জেলা চেম্বারগুলোকে একটি বিশ্ব মানের বিজনেস সার্ভিস সেন্টারে পরিণত করতে চাই। এফবিসিসিআই কেন্দ্রীয় ভাবে সকল জেলা চেম্বারকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করবে।
০৬। একটি কার্যকরী গবেষণা সেল তৈরি:
অর্থনীতিবিদ, ব্যবসা বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদ সমন্বয়ে একটি গবেষণা সেল প্রতিষ্ঠা করা হবে। দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানো হবে, এতে করে ফেডারেশন সচিবালয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এফবিসিসিআই কেন্দ্রীয়ভাবে এর সাথে সংযুক্ত অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারগুলো নিয়ে তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করে ব্যবসা ও শিল্পের জন্য দক্ষ শ্রমিক ও কারিগর তৈরি করবে।
০৭। বন্দর ও বন্দর নগরীর উন্নয়ন:
(০১) চট্টগ্রাম ও মংলা নৌ বন্দর এবং বেনাপোল সহ সকল স্থল বন্দরকে যুগোপযোগী করা। বন্দর সেবা পেতে এবং হয়রানি রুখতে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও খুলনায় এফবিসিসিআইএর সেবা কেন্দ্র খোলা হবে সেখান থেকে এর সদস্য ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান; সমস্যা সমাধানের জন্য সেবা নিতে পারবে।
(০২) খুলনায় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর স্থাপনের জন্য সরকারকে পরামর্শ প্রদান এবং সহায়তা প্রদান করবো। এতে করে (হোয়াইট গোল্ড) খ্যাত চিংড়ি রপ্তানি ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট এর পর্যটন সেবা বৃদ্ধি পাবে।
(০৩) নর্থবেঙ্গলে একটি সার কারখানা স্থাপন ও চিহ্নিত ‘ইজেড’ (ইকোনোমিক জোন) বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।
০৮। এফবিসিসিআই এর সদস্যদের বিশেষ সুবিধা প্রদান:
(০১) উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা প্রদান। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকরী নির্দেশনা প্রদানের জন্য এফবিসিসিআইয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শ, আইনি পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
(০২) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানী ঢাকায় আগত ব্যবসায়ীদের জন্য ‘এফবিসিসিআই কার পোল’ থাকবে। ঢাকায় অবস্থান কালে যাদের প্রয়োজন; তাদের জন্য স্বল্প খরচে পরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে।
(০৩) এফবিসিসিআই ভবনে সাধারণ পরিষদের সদস্যের জন্য একটি ‘জিবি লাউঞ্জ’ করা হবে, বসার জায়গা, সেক্রেটারিয়েট সুবিধাসহ ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(০৪) এফবিসিসিআই এর ৬৩ টি স্ট্যান্ডিং কমিটি এবং সরকারিভাবে ৯৩টি কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করবে। যোগ্য, অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
০৯। ডিজিটাল সেবা কর্মসূচি:
একবিংশ শতাব্দির এ প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সাথে উন্নত বিশ্বের সরাসরি যোগাযোগের জন্য তাদের প্রধান সংগঠন এফবিসিসিআই এ আমরা ডিজিটাল সার্ভিস চালু করব।
এফবিসিসিআই এর একটি বিশেষ ডাটাবেজ ও পোর্টাল তৈরী করা হবে। যা থেকে সদস্যরা কাঁচামালের দাম, আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি, বিশ্ব বাজারে আমদানি ও রপ্তানিকারকদের অফার নিয়মিত ভাবে জানতে পারবে। এই মূল্যবান তথ্য সেবা শুধুমাত্র এফবিসিসিআই এর সদস্য এবং এর অধিভূক্ত সংগঠনগুলোর সদস্যরা পাবে।
১০। রপ্তানি বৃদ্ধি:
যে সকল দেশ থেকে আমরা পণ্য আমদানি করে থাকি সে সকল দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনকে আমাদের দেশের উৎপাদিত ও তৈরিকৃত পণ্যের অতিরিক্ত অংশ আমদানির জন্য বাধ্য করব।
১১। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধা প্রদান:
আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশই নারী। এই বিশাল জনসংখ্যাকে পিছনে রেখে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই আমরা সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বি করে ব্যবসায় নতুন দিগন্তের সূচনা করব।
১২। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা:
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি সেবা প্রদানকারী দল গঠন করা হবে। যারা সার্বক্ষণিক একটি হটলাইনের মাধ্যমে ভ্যাট, ট্যাক্স ও ব্যাংক লোনের সমস্যার সমাধানে সার্বিক সহায়তা প্রদান করবে।
১৩। প্রতিবন্ধী ও শারীরিক ভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সহায়তা সেল:
দেশের প্রতিটি মানুষই দেশের সম্পদ। শারীরিকভাবে অক্ষম ও প্রতিবন্ধীরা আর দেশ ও তার পরিবারের বোঝা হয়ে থাকবে না। আমরা তাদের জন্য বিশেষ ট্রেনিং ও অর্থ সংস্থানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসাবে তৈরি করবো। এই প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা জাতির উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
১৪। ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ:
বহিঃবিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের উপযুক্ত খাত গুলো উপস্থাপন করা, যাতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে।
১৫। পর্যটন খাতের উন্নয়ন:
দেশের বিভিন্ন জেলায় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেবা খাত ‘পর্যটন’ শুরু করতে হবে। আমরা বাংলাদেশের এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে নিয়ে আসব।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/জেএস/এমএম