বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) ব্যাংকের ব্যাংকের আইটি বিভাগের মানব সম্পদের মূল্যায়ন শীর্ষক সেমিনারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আইটি ভিত্তিক মানব সম্পদ উন্নয়নে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা, সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থার উত্তোরণে ব্যাংকের আইটি ভিত্তিক মানব সম্পদ উন্নয়নে বাজেট বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করা হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘অ্যান ইভাল্যুয়েশন অব হিউম্যান রিসোর্সেস অব আইটি ডিপার্টমেন্টস ইন ব্যাংকস’শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমেরর পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং কন্সালটেন্সী) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। তিনি দক্ষ আইটি ভিত্তিক মানব সম্পদ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারের উদ্বোধন করে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এস এম. মনিরুজ্জামান বলেন, আইটি বিভাগের মানব সম্পদকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্যাংকিং অপারেশন এবং সাফল্য আইটি বিভাগের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। এ বিভাগের কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে।
সেমিনারের সভাপতিত্ব বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, অর্থনীতিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব চলছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংক কিভাবে আরও দক্ষ এবং কম সময়ে প্রযুক্তি নির্ভর সেবা দেওয়া সম্ভব সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ে প্রযুক্তি খাতের দক্ষতা গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে।
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা তার বক্তব্যে ব্যাংকারদের আরও সচেতন হওয়ার ওপর জোরারোপ করেন।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংক খাতে এখন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক ব্যাংক এখনও নিজেদের প্রস্তুতি পর্বে আছে। আইটি অফিসিয়ালদের দেশে-বিদেশে পুনঃ পুনঃ যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ব্যাংকের আইটি সিস্টেমকে মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখতে হবে এবং সময় সময় পরীক্ষামূলকভাবে লাইভ রান করাতে হবে। যাতে কোন দুর্যোগের সময়ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রযুক্তি খাতের খরচকে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনায় রাখতে হবে। সব পর্যায়ের ব্যাংকারদের আইটি বিষয়ক দক্ষতা থাকতে হবে।
বিআইবিএমের সাবেক সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি বলেন, ব্যাংককর্মীকে নিজের দক্ষতা দিয়ে গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। এতেই জব সাটিসফেকশন পাওয়া যাবে। কারণ জব সাটিসফেকশন শুধু বেতনই মূখ্য নয়, কর্মপরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামস-উল-ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং জগতে প্রযুক্তিতে বড় পরিবর্তন হচ্ছে। রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক প্রথম কোর ব্যাংকিং চালু করতে পেরেছে। অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে। এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হলে আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহারেও আরও দক্ষ হতে হবে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মো. শিরীন বলেন, বুয়েট এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা ডিগ্রী নিয়ে বের হচ্ছেন তারা ব্যাংক কিংবা অন্য খাতে চাকরি না করে বিদেশ চলে যাচ্ছেন। এজন্য আমাদেরকে ব্যাংকে আইটি খাতের মিড লেভেলের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে। মিড লেভেলে প্রশিক্ষণে অর্থ ব্যয় করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায় বলেন, গত কয়েক দশকে প্রযুক্তিতে অনেক বেশি বৈচিত্র্যকরণ হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের পর্ষদ ও উচ্চ পর্যায়ে নেতৃত্বের ধারণাগত পরিবর্তন হয়নি। এখনও একটি বড় অংশের সেকেলে ধারণা নিয়ে কাজ করছেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক মামুন। সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলম। পাঁচ সদস্যের গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন- বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিহাব উদ্দিন খান, বিআইবিএম-এর সহকারি অধ্যাপক কানিজ রাব্বী, বিআইবিএমের প্রভাষক ফয়সাল হাসান এবং এনসিসি ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব আইটি মো. শামসুর রহমান চৌধুরী।